রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫

পিলখানা হত্যাকান্ড ২০০৯

 দৈনিক আমার দেশের সৌজন্যে:


 কর্নেল গুলজারকে নিজের কবর নিজে খুঁড়তে বাধ্য করা হয়েছিল এবং মৃত্যুর আগে তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল:


বিডিআর বিদ্রোহের পর কয়েকমাসের মাথায় ২০০৯ সালের ৩ নভেম্বর মেজর রেজাউল করিমকে অপহরণ করা হয়।

মেজর রেজাউল করিমের চোখ টানা ৭/৮ দিন বাঁধা ছিল। ৭ দিন পর্যন্ত সে জানতেই পারেনি যে, সে কোথায় আছে।


৭ দিন পর যখন তার চোখ খোলা হয়, তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা'র হেফাজতে। সে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পায়, তার সামনে বসা মানুষটা কর্নেল সালেহ। তার সাথে ছিলেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস। তিনি ছিলেন সেসময়ের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের আপন ছোটভাই।


তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়: তিনি ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এর ওপর বোমা হামলার সাথে জড়িত।


এই অভিযোগের জবাবে মেজর রেজাউল করিম বলেন:


- স্যার, এটা খুবই লজ্জাজনক যে, আমার বিরুদ্ধে এরকম একটা অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কমান্ডো ট্রেনিং প্রাপ্তদের একজন। আমার আক্রমণে যদি একজন মানুষও মারা না যায়, এটা পুরো বাহিনীর জন্য লজ্জার স্যার। 


তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ আনা হয়েছিলো: তিনি বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানেত কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়ে সেনা বিদ্রোহের চেষ্টা করেছেন।


ফজলে নূর তাপস এর ওপর আসলে কোন বোমা হামলার ঘটনা ঘটনা ঘটেনি। তার অফিসের একটা এয়ার কন্ডিশন মেশিনে বিস্ফোরন ঘটেছিল। সারা বাংলাদেশে মেজর রেজাউল করিমের সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তন্নতন্ন করে খুঁজেও '৬ কোটি টাকা'র খোঁজ পাওয়া যায়নি।


মেজর রেজাউল করিমকে পরবর্তিতে সেনা আইনের নিজস্ব ধারা অনুযায়ী সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে 'অসদাচরণ' করার অপরাধে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।


MIST ( Military Institute of Science and Technology), সেনানিয়ন্ত্রিত ইউনিভার্সিটি Bangladesh University of Professionals- এর অধীনে একটা ইন্সটিটিউট। 


যারা আমাকে পার্সোনালি চেনেন, তারা জানেন BUP এর সাথে আমার পার্সোনাল কিছু হিসাবনিকাশ আছে। কিন্ত এই গল্পটা আমার না।


MIST এবং BUP তে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর অফিসার এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পড়াশোনা করতে আসেন।


পিলখানায় বিদ্রোহ শুরু হবার পর ভেতরে আটকে পড়া আর্মি অফিসাররা বিভিন্ন জায়গায় ফোন দেওয়া শুরু করেন।  এদের মাঝে কেউ কেউ সেসময়ে MIST- তে অধ্যয়নরত ব্যাচমেটদের কল দিতে শুরু করে। এই কল পাওয়া মানুষদের মাঝেই একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন সুবায়েল বিন রফিক।

এছাড়া কল পাওয়া আরেকজন ব্যাক্তি ছিলেন র‍্যাব -১ এ কর্মরত মেজর রেজাউল করিম।

MIST- তে অধ্যায়নরত সুবায়েল বিন রফিক আরো কয়েকজন ব্যাচমেটসহ অজ্ঞাত সোর্স থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে পিলখানার দিকে যাবার চেষ্টা করলে সেটা টিভিতে সম্প্রচার করা হয়। এসময় সিনিয়র অফিসাররা তাদের ইমিডিয়েট ফলব্যাক করার নির্দেশ দেন।


র‍্যাবে কর্মরত মেজর রেজাউল করিম এসময় সিনিয়র অফিসারদের জানান, এখনো সুযোগ আছে, যদি অনুমতি দেওয়া হয়, আটকে পড়া অফিসার এবং তাদের পরিবারকে বাঁচানো সম্ভব।




এই আবেদনের জবাবে মেজর রেজাউল করিমকে র‍্যাব থেকে প্রত্যাহার করে মূল বাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়।




র‍্যাব কোন প্রকার অভিযান সেদিন চালাতে পারেনি।




ইতিমধ্যে ভারতীয় মিডিয়াতে খবর চলে আসে সেই সময়ের বিডিআর ডিজি শাকিল আহমেদকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্ত দেশের মিডিয়াতে সেসময় এই খবর চেপে যাওয়া হয়। দেশের সেনা কর্মকর্তাদের বারবার আশ্বস্ত করা হয়... এরকম কিছুই ঘটেনি।




এই সময়ে মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র‍্যাক করে,  ফোন কনভার্সেশন শুনে এবং নানা উপায়ে আর্মি অফিসারদের একজন একজন করে খুঁজে বের করছিল ঘাতকরা। 




অনেক আর্মি অফিসারই ব্যাচমেটদের ফোনে জানাচ্ছিলেন তারা কোথায় লুকিয়ে আছেন। খুব সম্ভবত এটাও সেই আর্মি অফিসারদের খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হচ্ছিল।




শোনা যায়, সেসময় মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এর কাছে এমন একটা ভিডিও ছিলো, যেটাতে দেখা যায়, কর্ণেল গুলজারকে নিজ কবর খুঁড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। তারপর কর্ণেল গুলজার কে হত্যা করা হয়। কর্ণেল গুলজারকে হত্যার আগে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। জনশ্রুতি আছে মৃত্যুর আগে তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল।




সেদিন যে মিলিটারি অফিসারদের হত্যা করা হয়েছিল... তাদেরকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পোস্টিং দিয়ে পিলখানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। মূলত এক ধাক্কায় এদের সবাইকে মেরে ফেলাই ছিলো ওদের উদ্দেশ্য।




সেই ভিডিও ক্লিপ পরবর্তীতে র‍্যাব -২ এর জিয়াউল আহসান নিয়ে যায়। হ্যাঁ, এই সেই জেনারেল জিয়া। শেখ হাসিনার কসাই জিয়া।




জেনারেল জিয়া র‍্যাব - ২ এর অফিসে একটা ইন্টারোগেশন সেল খোলে। প্রায় প্রতিদিন দেখা যেত, তারা একজন করে বিডিআর জোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্য নিয়ে যাচ্ছে এবং পরে তার লাশ ফেরত দিয়ে যাচ্ছে।




এভাবে জেনারেল জিয়াউল আহসানের হেফাজতে ৪৭ জন বিডিআর জওয়ান মারা যায়। এরা এমন কিছু জানত বা এমন কিছু দেখে ফেলেছিল... যার জন্য তাদের বাঁচিয়ে রাখা শেখ হাসিনা নিরাপদ মনে করেনি।




পরবর্তীতে বিডিআর বিদ্রোহের ৩ জন গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী আত্মহত্যা করেন।




এখানে আমি একটা জিনিস এড করতে চাই। আপনাদের যাদের সেই সময়ের পত্রিকাতে এক্সেস আছে... তারা চেক করে দেখতে পারেন।




এই বিদ্রোহের পরের কয়েক সপ্তাহের মাঝে একটা হোটেলে একজন সেনা কর্মকর্তার আত্মহত্যা বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর নিউজ খুব সম্ভবত প্রথম আলোতে এসেছিল এবং একটা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাতেও একাধিক সেনা কর্মকর্তা মারা যান।




আমার ব্যাক্তিগত ধারণা... এই ঘটনাগুলোরও বিডিআর বিদ্রোহের সাথে যোগসূত্র আছে।




বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তিনটা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন আকন্দ। যে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়। 




বিজিবির তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন আজিজ। যে পরবর্তীতে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পায়।




সেনাবাহিনীর তদন্ত দলের প্রধান ছিলেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর। 




সেনাবাহিনীর তদন্ত দলের সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ পান ক্যাপ্টেন সুবায়েল বিন রফিক।




তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায়, এই বিদ্রোহের পরিকল্পনা নভেম্বর থেকেই শুরু হয়। আওয়ামী লীগের দুইজন সাংসদের বাসায় এই পুরো পরিকল্পনা করা হয়। আওয়ামী লীগের দুইজন সাংসদ এই পরিকল্পনার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। সেই সাংসদদের একজন এক মিটিং এ পরামর্শ দেন-




- বেশি অফিসার মাইরো না। অফিসার মানুষ। দুই একজন মাইরো। আমরা সামাল দিবো নে।




সেই দুই সাংসদের নাম ছিলো ফজলে নূর তাপস এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক।




২০০৯ সালের অক্টোবরের ১৪ তারিখ সেনাবাহিনীর তদন্ত দলের সমন্বয়কারী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সুবায়েল বিন রফিককে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে শেখ হাসিনা তদন্ত রিপোর্টটা সুবায়েল বিন রফিক এর মুখের উপর ছুড়ে মারে এবং বলে:




- এগুলা কী আসতেছে রিপোর্ট- এ। কোনো পলিটিক্যাল ফিগারের নাম রিপোর্টে আসা যাবে না। 




১৯ অক্টোবর ক্যাপ্টেন সুবায়েল বিন রফিককে আবারো ডেকে পাঠানো হয়। এসময় শেখ হাসিনা জানতে চান রিপোর্ট কেন এখনো চেঞ্জ করা হয়নি।




ক্যাপ্টেন সুবায়েল বিন রফিক জবাব দেন:




- আমি আমার ভাইয়ের রক্তের সাথে বেঈমানি করতে পারবো না।




এরপর সুবায়েল বিন রফিককে তুলে নিয়ে যাওয়া। তাকে ৩৬১ দিন অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা হয়।




সেই অজ্ঞাত স্থানই বর্তমানের - আয়নাঘর।




মেজর রেজাউল করিম পরবর্তীতে আর কখনোই চাকুরিতে ফিরতে পারেননি। পাঁচ বছর পর যখন তিনি জেল থেকে বের হয়ে আসেন... তার জীবন জাহান্নামে পরিণত করা হয়। তিনি কোথাও চাকরির দরখাস্ত করলে... সেখানে ফোন করে হুমকি দেওয়া হতো। তিনি ব্যবসা করতে গেলে তার পার্টনারকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হতো। 




মেজর রেজাউল করিম পরবর্তীতে উবার ড্রাইভার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করেন। সেখানেও বাঁধার সৃষ্টি হলে তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা শুরু করেন।




একজন নেভি অফিসারের সন্তান... যে নিজেও একজন আর্মি অফিসার... যে নিজে কমান্ডো ট্রেনিং- এর সর্বোচ্চ ধাপগুলো অতিক্রম করা.... তাকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে টাকা রোজগার করতে হতো।




এরচেয়ে দু:খজনক আর কী হতে পারে?




এরপর সেনাবাহিনীর বাছাই করা অনুগত অফিসাররা র‍্যাবে আসতে থাকেন। জেনারেল জিয়াউল আহসান ছোট্ট আইসবার্গের মাথা মাত্র। এরকম অসংখ্য খুনি অফিসার এখনো সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে আসীন আছেন।




এবং এই র‍্যাব থেকেই পরিকল্পিতভাবে পুলিশের মাঝে কিলিং স্কোয়াড চালু করা হয়। গুম-ক্রসফায়ারের কালচার পুলিশে ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পড়ে।




র‍্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনীকে কীভাবে দানবে পরিণত করা হলো... তা জানতে হলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সেইসব অফিসারের কাছে আপনাকে যেতে হবে... যাদের বছরের পর বছর প্রমোশন দেওয়া হয়নি। যাদের বিনা দোষে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। যাদের ডাম্পিং পোস্টিং- এ ফেলে রাখা হয়েছে।




আপনার জানা দরকার: ২০০৯ এর পর থেকে অসংখ্য আর্মি অফিসারকে ইসলামিস্ট আখ্যায়িত দিয়ে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।




________________________________________________




আমাদের সামগ্রিক ভাবে দাবি তুলতে হবে:




১. পিলখানা হত্যার সবগুলো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।


২. মানবাধিকার লংঘনে জড়িত সব সেনা অফিসারের বিচার করতে হবে।


৩. র‍্যাব ভেংগে দিতে হবে।


৪. দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।




এবং




৫. সেনা কিংবা পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া প্রত্যেক বিডিআর জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনাতেও তদন্ত করতে হবে। 




[তথ্যসূত্র:  ক্যাপ্টেন সুবায়েল এবং মেজর রফিক- এর তৃতীয়মাত্রায় দেওয়া নিজ মুখের বক্তব্য, এবং ব্যাক্তিগত চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা এবং পার্সোনাল সোর্স।]




Mohammad Yousuf @everyone @highlight

ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্ব শক্ত অবস্থান নিতে পারে না কেন?

 

 বিবিসি বাংলা 

 ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:১৫ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ


হামাস ইসরাইল সংঘাত

বাংলাদেশসহ মুসলমান প্রধান দেশগুলো সবসময় ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং ‘নিপীড়িত’ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আসলেও বড় ধরণের সংকট এলে পুরো মুসলিম বিশ্বকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে খুব একটা শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায় না।


এমনকি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি কিংবা আরব লীগও ইসরাইলের সঙ্গে সংকটকালে ফিলিস্তিনের পক্ষে খুব জোরালো কোন ভূমিকা নিতে পারে না।


এবার গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস ইসরাইলি ভূখণ্ডে অতর্কিতে ভয়াবহ হামলার পর নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। উভয় পক্ষের আক্রমণে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের সর্বাত্মক সমর্থনে এগিয়ে এসেছে।


এর বিপরীতে মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে ইরান ছাড়া আর কোন দেশকেই উচ্চকণ্ঠে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না। বরং কোন কোন মুসলিম দেশের প্রতিক্রিয়া ছিলো একেবারেই নখদন্তহীন।


বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসলিম বিশ্বের জনগণ ফিলিস্তিনের পক্ষে একাট্টা হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে সরকারগুলোর পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়া অসম্ভব।


সৌদি আরবে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া বা শক্ত অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় সীমাবদ্ধতার জায়গা হলো পশ্চিমাদের অবস্থান।


বিবিসিকে তিনি বলেন, ইসরাইল একা প্রতিপক্ষ হলে এতদিনে পরিস্থিতি অন্যরকম দেখা যেত। তবে ইসরাইলেও অনেকে শান্তি চায়। সে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সাথে এখন তাদের যোগাযোগ হচ্ছে। এমন নানা কারণে মুসলিম বিশ্বের এমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। 


এবার ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামাস এমন সময় হামলা চালিয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে কাজ করছিলো সৌদি আরব ও ইসরাইল। গত সেপ্টেম্বরে এ নিয়ে রিয়াদে এসে কথা বলে গেছেন মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারাও।


এর আগে আমেরিকার তত্ত্বাবধানেই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছে আরব বিশ্বের আরেক প্রভাবশালী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।


যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে একটি সমঝোতা বা চুক্তি স্বাক্ষরের সফলতা অর্জন করতে চাইছে বাইডেন প্রশাসন।


তবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হওয়ার পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে সৌদি আরব।


সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, তার দেশ ‘ফিলিস্তিনি জনগণের একটি স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার রক্ষা, তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা এবং ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য সবসময় তাদের পাশে থাকবে।’  


আরেক প্রভাবশালী আরব দেশ কাতার বরাবরই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিরোধী। দেশটি তাদের বিবৃতিতে পরিস্থিতির জন্য ইসরাইলকেই দায়ী করেছে। দেশটি ফিলিস্তিনের জন্য পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের আগের ভূখণ্ডকে সমর্থন করে।


সংযুক্ত আরব আমিরাত হামাসের হামলার সমালোচনাও করেছে। এমনকি দেশটির বিবৃতিতে ইসরাইলি নাগরিক জিম্মি করার বিষয়টি উঠে এসেছে। কিন্তু ইসরাইলের প্রাণঘাতী হামলার বিষয়টি সেখানে আসেনি।


বাহরাইন হামাসের হামলার সমালোচনা করেছে। আর কুয়েত ও ওমানের প্রতিক্রিয়া ছিলো অনেকটাই কৌশলী।


অন্যদিকে ইসরাইলের সাথে ১৯৮০ সালেই চুক্তি করা মিসর উভয় পক্ষকে সংযত হতে বলেছে। মরক্কো অবশ্য গাজায় সামরিক হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সিরিয়া অবশ্য হামাসের হামলাকে বড় অর্জন বলেছে। হুতি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনও হামাসকে সমর্থন দিয়েছে।


আর আরব বিশ্বের বাইরে অনেকটা একই সুরে কথা বলেছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো।


স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিনি বিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছে একেবারে শুরু থেকেই।


এর কারণ যতটা না আন্তর্জাতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশের জনমত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।


বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্র এবং প্রতিনিধিত্বশীল সরকার মুসলিম বিশ্বে খুবই কম এবং এ ধরনের দেশগুলোর সরকারকে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয় বলে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই।


আবার ফিলিস্তিনে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন পিএলও, গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাসের পাশাপাশি আরেক সংগঠন হেজবুল্লাহকেও বিভিন্ন প্রভাবশালী মুসলিম দেশ সমর্থন দিয়ে থাকে বলে প্রচার আছে।


যেমন হামাস ইরান-সমর্থিত বলে বর্ণনা করে পশ্চিমারা।


অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো প্রভাবশালী আরব দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলের সাথে তাদের সম্পর্ক জোরদার করেছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই ফিলিস্তিনিদের স্বার্থকে দুর্বল করেছে বলেও মনে করেন অনেকে।


বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলছিলেন যে মুসলিম বিশ্বে প্রভাবশালী আরব দেশগুলোর, কেউ কেউ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে আবার কেউ কেউ স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় আছে। নিজেদের ক্ষমতাকে তারা চিরস্থায়ী করে রাখতে চায়। সংগত কারণেই তারা হয়তো মনে করে পপুলার সেন্টিমেন্ট যাই হোক ইসরাইলকে ঘাঁটানো তাদের ঠিক হবে না। এ কারণেই তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত দেখা যায় না। 


জার্মানি ভিত্তিক বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক বলছেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী আরব বিশ্বে গণতন্ত্র বা নির্বাচনের বালাই নেই। ইসরাইলের সাথে সমঝোতা বা ভারসাম্য রক্ষা করে চলা তাদের জন্য জরুরি।  


মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শাসক পরিবারগুলো ক্ষমতার প্রশ্নে কোন ধরনের আপোষ কখনোই করে না। আবার এসব দেশে গণতন্ত্র বা জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থাও কাজ করে না।


তারপরেও অনেকেই মনে করেন লিবিয়া ও সিরিয়ার ঘটনার পর আরব দেশগুলোর রাজপরিবারগুলো নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন।


সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলছেন, মুসলিম দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ জটিল রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং পাশ্চাত্য নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার কারণেই ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারছে না।


বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, বেশিরভাগ দেশেই দুটি প্রবণতা—জনগণ ফিলিস্তিনের পক্ষে বেশি কিন্তু সরকারগুলোর কথায় জোর কম। তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যবস্থার জটিলতার কারণেই তারা শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে না। 


আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসক নির্বাচন করার সুযোগ আছে ইরানে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল বলয়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল শক্ত অবস্থান নিয়ে আসছে।


অন্যদিকে তুরস্ক বিবৃতিতে শক্ত ভাষা ব্যবহার করলেও ন্যাটোর সদস্যপদসহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে কৌশলী ভূমিকা নিতে হচ্ছে।


এর বাইরে অন্য দেশগুলোর সরকার ও জনগণের চিন্তার মধ্যেই প্রচুর ব্যবধান তৈরি হয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি। 


বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক বলছেন মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই গণতন্ত্র নেই এবং সে কারণে এসব দেশের সরকারকে সমঝোতা করে চলতে হয়।


তিনি বলেন, পশ্চিমাদের চটিয়ে কেউ নিজের ক্ষমতাকে দুর্বল করতে চায় না। মিসর, তিউনিসিয়ার মতো দেশও এর বাইরে নয়। সবাই জানে সোচ্চার হলেই চাপ আসবে। বরং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ইসরাইলের সাথে তাদের সমঝোতা জরুরি।  


একই কারণে ওআইসি বা আরব লীগও চুপচাপ থাকে বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি তার মতে রাজতন্ত্রের বাইরে থাকা দেশগুলো- বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সোচ্চার হওয়ার মতো প্রভাবই নেই।


যদিও এ নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ শোনা যায় বিভিন্ন মহল থেকে। অনেকে মনে করেন ইসরাইলকে ঘিরে আরব দেশগুলোতে চিন্তার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় থেকে।


আরব-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ট্রাম্পের ভূমিকা আর ওই অঞ্চলে ইরানের সাথে বিরোধিতার কারণেই অনেক আরব দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক তৈরির প্রক্রিয়ায় জড়িয়েছে।


তবে সবমিলিয়ে এসব কিছুই মূলত ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বকে শক্ত অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বল করে রেখেছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।


বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা মনে করেন, আরব দেশগুলো রাজতন্ত্র বা একক শাসন থাকায় যেভাবে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেটি আবার বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে সম্ভব হবে না।


তাই প্রভাব বিস্তারের মতো ক্ষমতা না থাকলেও এসব দেশকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে শক্ত ভাষাতেই কথা বলতে হয়।


https://www.facebook.com/100078324804106/posts/pfbid031fTcX5k3H2FFHFxWwda41JL9VVnzEJGd42jywXoZVM8qVyRYiYVrfA1h6xZTd8Zgl/?sfnsn=mo&mibextid=VhDh1V


https://www.jugantor.com/location/%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A8

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’

 Sheikh Mujibur Rahman policy


Pilkhana




ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’


 বিদেশী মিশনগুলোর মধ্যে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশ মিশন। ভারতের ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের উপর নিয়ন্ত্রন রাখা খুবই জরুরি। তাই বাংলাদেশের উপর নিয়ন্ত্রন হারানো ভারতের জন্য উদ্বেগ ও শংকার বিষয়।


গত প্রায় দেড় দশকে ‘র’ এর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিডিআর বিদ্রোহ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে যেভাবেই হোক আওয়ামী লীগ নিয়ে জিতিয়ে নিয়ে আসা। এই চ্যালেঞ্জ ‘র’ ভালোভাবেই উতরে গেছে। ২০২৪ সালেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে তারা সফল হয়েছে। 



দিল্লীর কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ২০২৩ সালের মে মাসে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফরে ‘র’ এর তৎকালীন চিফ ও বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা দু’জন সাবেক হাই কমিশনারের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দীর্ঘ বৈঠক করেন। মূলত ওই বৈঠকেই যুক্তরাষ্ট্রকে বশে করার পরিকল্পনা ঠিক করা হয়। এই পরিকল্পনাতেও ‘র’ সফল হয়েছে। তাই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা ও ‘র’ উভয়েই নির্ভার ছিল।  




সম্প্রতি শেখ হাসিনা দিল্লী সফরে গিয়ে ‘র’ এর সাহায্যের  প্রতিদান স্বরুপ ভারতের সঙ্গে তিনটি চুক্তি করেছেন। বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে এসব চুক্তিতে ভারতকে সুবিধা দেয়া হয়েছে একতরফা ভাবে। মংলা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা ভারতকে দেয়া হয়েছে। বাকী দুটো হচ্ছে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে আসাম ও ত্রিপুরায় রেল চলাচলের করিডোর  ও তিস্তা নদী প্রকল্প। মংলা ও রেল করিডোর চুক্তি শেষ পর্যন্ত হলেও তিস্তা প্রকল্প থেমে যায় বাংলাদেশের কিছু আামলার উদ্দেশ্য প্রনোদিত কালক্ষেপনের কারণে। চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়নি বলে কৌশলে চুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।




বাংলাদেশের আমলাদের একটি সূত্র বলছে, রেল করিডোর চুক্তি সংক্রান্ত ফাইলটি দিল্লির বাংলাদেশী হাইকমিশন বা রেল মন্ত্রনালয়ে নেই। এই ফাইলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আছে। কারণ চুক্তির একটি ধারায় বলা হয়েছে, ‘চলন্ত রেলে ভারত কি পরিবহন করবে তা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দেখতে ও জানতে পারবে না। তবে ভারতীয় রেল বাংলাদেশ ভূখন্ডে কোন নিরাপত্তাজনিত সংকটে পড়লে বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতা করবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।’ মানে বাংলাদেশে ভারতের সৈন্য প্রবেশ করতে পারবে তাদের রেলকে নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলে। অনেকেই মনে করছেন এই চুক্তি করে ভারত মূলত বাংলাদেশে সৈন্য পাঠানোর এক ধরনের বন্দোবস্তু করে রাখলো। 




এই তিনটি চুক্তির বিষয় ফাঁস হওয়ার পর চীন শেখ হাসিনার উপর নাখোশ হয়। চীনের ধারণা বাংলাদেশের রেল কড়িডোর দিয়েই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীনকে ঠেকাতে সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন করা হবে। এ কারণেই শেখ হাসিনা চীন সফর গিয়ে প্রত্যাশিত সফলতা পাননি। চীনের পক্ষ থেকে এরকম শীতল আচরণই করা হয়েছে।  




শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে যখন দিল্লিতে ‘র’ কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে তখনই ঢাকায় ছাত্ররা কোটা আন্দোলন নিয়ে রাজপথে নেমে আসে। এই আন্দোলনের গতিবিধির উপর নজর রাখার বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক নবীন বাঙালি ‘র’ কর্মকর্তাকে।




ওই বাঙালি কর্মকর্তার ১৭ জুলাই পাঠানো তথ্য পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন ‘র’ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দিল্লীতে ‘র’এর কাছে তথ্য আসে ঢাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর গুলির নির্দেশ দিয়েছে পুলিশের হাইকমান্ড। শুরুতে এটা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদের অনুসারীদের কাজ হিসাবে ভাবলেও পরে তারা জানতে পারে সরকারের উচ্চমহল বেশ ঘৃণাসূচক শব্দ উচ্চারণ করেই গুলির নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ গুলি করে দমানোর চেষ্টা করলেও ২৪ ঘন্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১৮ জুলাই উভয় দেশের সরকার বিচলিত হয়ে পড়ে। দিল্লিতে শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বেশ কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিকের সাথে আলোচনা করে জানায় পরিস্থিতি ‘বিডিআর বিদ্রোহের চেয়ে ভয়াবহ’। তিনি বলেন Our student has rebelled। 




এরপর শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘র’ প্রধানের সরাসরি ফোনালাপ হয়। ওই আলাপে কারফিউ জারির বিষয়টি উঠে আসে এবং শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দোলনে জামাত শিবির প্রবেশ বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বার্তা দেওয়া হয়। 




টেলফোন আলোচনায় ‘র’ এর পক্ষ থেকে কারফিউ জারির পরামর্শ দেওয়াও পাশাপাশি দ্রুত একটি দল পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা কারফিউ জারি করতে রাজি হলেও ডিজিএফআইয়ের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু ডিজিএফআইয়ের আগেই ‘র’ হাসিনাকে সেনাবাহিনীর বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। উল্লেখ্য ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের পর ডিজিএফআইয়েরই একটি অংশ ‘র’ এর বাংলাদেশ সেলে পরিনত হয়েছে। এরাই মূলত ভারতকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব তথ্য সরবরাহ করে থাকে। এই সেল ভারতের কাছ থেকে সামরিক অস্ত্র কেনাসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রভাবিত করে।  




‘র’ ও শেখ হাসিনার ধারণা ছিল কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু শনিবার ঢাকায় কারফিউ ভেঙে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং অর্ধশত নিহত হয় বলে তথ্য যায় দিল্লিতে। একই সঙ্গে ‘র’ জানতে পারে আওয়ামী লীগের একাংশের নীরব সমর্থন রয়েছে আন্দোলনের প্রতি। 




এ অবস্থায় শনিবার দিল্লি ও কলকাতায় একাধিক বৈঠক করে ভারতীয় নীতি নির্ধাকরা। পরামর্শ নেওয়া হয় বাংলাদেশের উপর নজর রাখা সাংবাদিক ও মালদ্বীপে বৈঠকে থাকা ওই দুই ভারতীয় সাবেক কূটনৈতিকেরও। বৈঠকে অনেকেই শেখ হাসিনার দিন শেষ মন্তব্যও করেন। কিন্তু তার মধ্যেই ‘র’ প্রধান বৈঠকে বার্তা একটি বার্তা পাঠায় ‘ প্রয়োজনে পূর্বে আরেকটা কাশ্মীর বানাও তবুও শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখো।’




নির্দেশ পেয়েই ‘র’ এর দলটি শনিবার ঢাকায় তেঁজগাও বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ঢাকায় নেমেই ‘র’এর দলটি বৈঠক করে ডিজিএফআই, ডিবি পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিশেষ নজর রাখা হয় মার্কিন দূতাবাস ও চীনা দূতাবাসের উপর।




শনিবারই সিদ্ধান্ত হয় ২০১৯ সালে কাশ্মীরে দমনের পদ্ধতি অনুসরণ করে ঢাকা মিশন ২০২৪ সফল করা হবে। সব ধরনের ফোন কল ফোন কলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসারদের উপর বিশেষ নজর রাখা হয়। লাশ গুম করার টিমও তৈরী করা হয়। কাশ্মীরের মতই বাড়ি বাড়ি তল্লাশী শুরু করে যৌথ বাহিনী।




‘র’ কর্মকর্তারা সরাসরি ঢাকার মাঠে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় ঢাকায় ভারত বিরোধী নানা গুঞ্জন তৈরী হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে শোনা যায় কিছু লোককে। হাইকোর্টের রায় ও সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পাশাপাশি পরিস্থিতি শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে ২৪ জুলাই ‘র’ এর দলটিকে আর মাঠে না নামার  নির্দেশ দেয়া হয় দিল্লি থেকে। ২৫ জুলাই থেকে মাঠ থেকে সরে আসে ‘র’ দলটি। এরপর সহায়ক একটি টিম দিল্লি থেকে পরামর্শ দিচ্ছে। 




এর পাশাপাশি দিল্লী ও কলকাতাতেও যেন বাংলাদেশ বিরোধী কোনো বিক্ষোভ না হয় সে বিষয়ে বিশেষ সতর্ককতা অবলম্বন করা হয়। বাংলাদেশ হাই কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি তদারক করছে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া এক কর্মকতা। এরপর কলকাতায় বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন ঘেরাও করলে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন চাপে পড়ে যায়।




২১ জুলাই রবিবার জওহারলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের এক অধ্যাপককে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে মধ্যাহ্ন ভোজনের নিমন্ত্রন করা হয়। ওই মধ্যাহ্ন ভোজনে জওহারলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থি সংগঠনগুলো যেন দিল্লিতে কোন বিক্ষোভ না করে বা হাইকমিশন ঘেরাও করতে না আসে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় এই অধ্যাপককে।




লেখা:~ উত্তম গুহ দিল্লী থেকে




রবিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২১

জো বাইডেন প্রশাসন ও ফিলিস্তিন সমস্যা-

File Picture :


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও একই সাথে সরকারপ্রধানও। দেশটির ফেডারেল সরকারের নির্বাহী শাখা চলে প্রেসিডেন্টের নির্দেশনায়। তিনি দেশের সশস্ত্রবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ। ফেডারেল সরকারের সার্বিক ক্ষমতা তারই হাতে। আমেরিকার রাজনৈতিক জীবনে তার শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। দেশটি বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হওয়ায় এর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় যোগ হয়েছে বাড়তি মাত্র। জিডিপি বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তার রয়েছে আলাদা মর্যাদা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যাবতীয় ক্ষমতা সংবিধান স্বীকৃত। সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ অনুসারে গঠিত ফেডারেল সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে। এসব ক্ষমতার মধ্যে আছে : ফেডারেল আইন কার্যকর ও প্রয়োগ করা, ফেডারেল সরকারের নির্বাহী কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাদের নিয়োগদান। সংবিধানের প্রবিধান মতে, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা রাখেন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ ও গ্রহণসহ বিদেশের সাথে চুক্তি করা, কংগ্রেসে আইন পাস করার ইত্যাদি। আধুনিক যুগের মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রাথমিক দায়িত্ব বিদেশনীতি পরিচালনা। তিনি ক্ষমতা রাখেন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সামরিক বাহিনী পরিচালনার, যার রয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘নিউক্লিয়ার আরসেনাল’। তিনি ক্ষমতা রাখেন ফেডারেল আইনে স্বাক্ষর কিংবা ভেটো প্রয়োগের। তিনি একটি রাজনৈতিক দলেরও নেতা। অতএব দেশটির নীতি-নির্ধারণেও রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ধারণ করেন উল্লেখযোগ্য মাত্রার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক হার্ড পাওয়ার (সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা) এবং সফট পাওয়ার (কোনো বলপ্রয়োগ না করেই অন্য দেশকে নিজের দেশের মতের বা চাওয়া-পাওয়ার পক্ষে আনার ক্ষমতা)। এত ক্ষমতা নিয়ে জো বাইডেন এখন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। গত ২০ জানুয়ারি তিনি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি চাইলে বিশ্বের অনেক সমস্যারই ন্যায়ভিত্তিক সমাধান করতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে অধিকতর ন্যায়ানুগ হয়ে ওঠা। বাইডেন তা করতে কতটুকু পারবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ও তার দলের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার সাথে সদ্যবিদায়ী রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দলের রাজনীতির উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। সে কারণে ট্রাম্পের মতো একরোখা যুদ্ধপ্রেমী ও ইসরাইলপ্রেমী প্রেসিডেন্টের বিদায় ঘটিয়ে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়া নিশ্চিতভাবেই ইসরাইলকে খুশি করেনি। অনেকেই মনে করছেন, ইসরাইল ট্রাম্পের কাছ থেকে যে চরম ফিলিস্তিনবিরোধী সমর্থন অব্যাহতভাবে পেয়ে আসছিল, তার আপাত ছেদ ঘটবে বাইডেনে আমলে। অনেকেরই বিশ্বাস, জো বাইডেন আর যা-ই করুন, ফিলিস্তিন প্রশ্নে অন্তত একটি স্থিতাবস্থা বজায় রাখবেন।’ কার্যত তেমনটিই ঘটবে বলে মনে হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে বাস্তবায়ন করেন স্বদেশের বিদেশনীতি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ট্রেজারি সেক্রেটারি, ডিফেন্স সেক্রেটারি ও অ্যাটর্নি জেনারেল বিবেচিত হন মন্ত্রিপরিষদের চার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে; তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বের কারণেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মনোনয়ন দেন প্রেসিডেন্ট। এরপর পররাষ্ট্র নীতিসম্পর্কিত কনফারমেশন হিয়ারিং শেষে সে দেশের সিনেট তার নিয়োগ নিশ্চিত করে। জো বাইডেন এরই মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে। সিনেটের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। ব্যতিক্রমী কিছু না ঘটলে তিনিই হতে যাচ্ছেন বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনেকেই মনে করছেন- অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বিল ক্লিন্টন ও ওবামার প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিই অব্যাহত রাখবেন। ব্লিঙ্কেনের বাবা ও চাচা ক্লিন্টন প্রশাসনের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর তার ‘বৈ-পিতা’ কাজ করেছেন জন এফ কেনেডি প্রশাসনে। তাকে বিবেচনা করা হয় মাল্টিল্যাটারেলিস্ট ও ইন্টারন্যাশনালিস্ট হিসেবে, যিনি ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখায় বিশ্বাসী। তিনি ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি সমর্থন করেন। তবে তিনি ইসরাইলের একজন সমর্থকও। অতএব প্রশ্ন আসে- জো বাইডেনের আমলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলের সাথে আমেরিকার সম্পর্কটা শেষ পর্যন্ত কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে? ট্রাম্পের অধিকতর জটিল করে তোলা ফিলিস্তিন সমস্যা প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান কী হবে? এদিকে বাইডেন প্রশাসনকে মোকাবেলা করতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনের রেখে যাওয়া কোভিড-সম্পর্কিত ব্যাপক জনস্বাস্থ্য সঙ্কটসহ নানা অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এ ছাড়াও আছে ট্রাম্পের এলোমেলো করে রেখে যাওয়া চীনের সম্প্রসারণবাদনীতি-সংশ্লিষ্ট সমস্যা, ইউরোপে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত জটিল সমস্যা এবং ইরানের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন করে সৃষ্টি করা বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলার মতো কাজ। তাই এতসব আশু করণীয় সমস্যা মোকাবেলা করে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে বাইডেন কতটুকু মনোযোগী হতে পারবেন? সে বিষয়ে আছে সংশয়। তবে আশা করা যেতে পারে, তিনি হয়তো ফিলিস্তিন-সম্পর্কিত কিছু ক্ষতিকর পদক্ষেপ পাল্টে দিতে পারেন। যেমন : তিনি ওয়াশিংটনে পুনরায় খুলে দিতে পারেন পিএলও অফিস; ফিলিস্তিনিদের সেবাকাজের জন্য পূর্ব জেরুসালেমে খুলতে পারেন মার্কিন কনস্যুলেট অফিস এবং আবার চালু করতে পারেন ট্রাম্পের বন্ধ করে দেয়া ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস অ্যাজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস’ (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর তহবিল সরবরাহ। কিন্তু বাইডেন জেরুসালেম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিবে ফিরিয়ে যে নেবেন না, সে ব্যাপারটি তিনি নির্বাচনের আগেই স্পষ্ট করেছেন। বাইডেনের মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনও একইভাবে বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে বাস্তবসম্মত হবে না। তা ছাড়া তিনি মনে করেন, সমঝোতা প্রশ্নে ফিলিস্তিনিদের ব্যর্থতা রয়েছে। তার মতে, ফিলিস্তিনিদের এমন নেতৃত্ব দরকার, যারা ইহুদি রাষ্ট্রের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে বাইডেন সুস্পষ্টভাবে ইসরাইলবিরোধী ‘বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার, নিষেধাজ্ঞা আন্দোলন’ (বিডিএস) প্রত্যাখ্যান করেন। এর বাইরে, ইরান-সম্পর্কিত ট্রাম্পের নীতির বিপরীত কিছু করতে গেলেই মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সাথে বাইডেনের মতবিরোধ দেখা দেবে। তা ছাড়া, ইসরাইল এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, বাইডেন ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি বহাল করলে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। অতএব এটুকু স্পষ্ট, ট্রাম্প-উত্তর বাইডেন ফিলিস্তিনিদের জন্য বড় কিছু করবেন- এমনটি দুরাশা মাত্র। বড়জোর একটা স্থিতাবস্থা ফিলিস্তিনিরা কামনা করতে পারেন।
ইতিহাসের ধারাটিও ফিলিস্তিনের বিপরীতে। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থনপুষ্ট ইসরাইলের উপনিবেশবাদী দখলদারিত্বে ফিলিস্তিনিরা অব্যাহত চরম দুর্ভোগের শিকার। এ কাজে যুক্তরাষ্ট্র বরাবর ইসরাইলকে জুগিয়ে আসছে রাজনৈতিক, আর্থনীতিক ও সামরিক সমর্থন। এর ফলে ইসরাইল ফিলিস্তিনে ক্রমেই উপনিবেশ তথা দখলদারিত্ব সম্প্রসারণে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের মাত্র ৫ শতাংশ জায়গা ফিলিস্তিনিরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই প্রক্রিয়ায় কার্যত কোনো আন্তর্জাতিক বাধার মুখে কখনোই পড়তে হয়নি ইসরাইলকে। সেখানে স্বঘোষিত মধ্যস্থতাকারী ওয়াশিংটন কথিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’র নামে নানা কৌশলী প্রক্রিয়ায় বরাবর ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা ও এর ইচ্ছা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে।
২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কৌশলে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের উপনিবেশায়নকেই সম্প্রসারিত করার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করে গেছেন ইসরাইলের বর্ণবাদী ও চরম সন্ত্রাসী অ্যাজেন্ডা নীতি বাস্তবায়নের পক্ষে। অপর দিকে, ফিলিস্তিনিদের অধিকার সংরক্ষণ ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উচ্চারণ করেছেন মিষ্টি মিষ্টি কথা। ইসরাইলের ডানপন্থী সরকার যা চেয়েছে, তাই করতে দিয়েছেন ও জুগিয়েছেন সক্রিয় সহায়তা- নীতিসহায়তা থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনবিরোধী নানা পদক্ষেপে ইসরাইলকে প্ররোচিত করাসহ অব্যাহত সামরিক সহায়তা দিয়েছেন। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বেআইনি ও অবৈধ কর্মকাণ্ডকে দিয়েছেন বৈধতা। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের অধিকার বাস্তবায়নের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক ও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে ইসরাইল কার্যত ফিলিস্তিনবিরোধী তৎপরতা আরো জোরদার করেছে ট্রাম্প প্রশাসনের সক্রিয় সহায়তায়। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি বিল পাস করেছিল। মার্কিন প্রশাসন দুই দশকেরও বেশি সময়েও তা কার্যকর করেনি। কিন্তু ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশ জারি করে এই আইন বাস্তবায়ন করেন তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তরে। পরের বছর ১৪ মের ‘নাকবা দিবসে’ তা কার্যকর করা হয়।
এর কয়েক মাস পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস অ্যাজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস’ প্রত্যাহার করে নেয়ার। এটি ছিল লাখ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য রীতিমতো একটি আকস্মিক বিপত্তি। কারণ- তারা খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোর তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। আসলে এটি ছিল শরণার্থী হিসেবে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি মর্যাদাহানিকর পদক্ষেপ। সেই সাথে ট্রাম্প প্রশাসন তৎপর ছিল, যাতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরে এসে তাদের মাতৃভূমির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারে; ঠেকাতে না পারে জাতিগত নিধন। তাদের দেশে ফিরে আসার অধিকার বাধাগ্রস্ত করা হয় ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’র মাধ্যমে, যা তার জামাতা কুশেনার সামনে নিয়ে আসেন। এই ডিলে আগের ‘শান্তি উদ্যোগের’ ভাষার আদলে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা হয় ফিলিস্তিনিদের ‘শান্তি’ ও ‘সমৃদ্ধি’র। কিন্তু অস্বীকার করা হলো তাদের বেশির ভাগ দাবি। বিশেষ করে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের মৌল দাবিটি এই ডিলে অস্বীকার করা হয়েছে।
ট্রাম্প আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ঘোষণা দেন : যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করে দেখবে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি নির্মাণে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না। ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ মাসটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইলকে আরেকটি বড় ধরনের পুরস্কার দিয়ে যেতে ভুল করেননি। সেটি হচ্ছে, ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ করার পদক্ষেপ। সেটি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি আরেকটি বড় ধরনের আঘাত।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর আরব লিগ সৌদি আরবের মরহুম বাদশাহ আবদুল্লাহর উদ্যোগে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিছু শর্তসাপেক্ষে। শর্তগুলো ছিল : ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে; শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনতে হবে এবং গোলান উপত্যকা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।
গত বছর আগস্টে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ট্রাম্প প্রশাসনের প্ররোচনায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি করে ইসরাইলের সাথে। এসব চুক্তিতে দেশ দুটি এসব শর্ত বেমালুম ভুলে যায় এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে কোনো দাবি তোলেনি। এর অল্প সময় পরে মরক্কো ও সুদান ইসরাইলের সাথে একই ধরনের চুক্তি করেছে। এটি ‘শান্তির বিনিময়ে ভূমি’ সম্পর্কিত ঐকমত্যের সম্পূর্ণ বিচ্যুতি।
এমনি প্রেক্ষাপটে আমেরিকায় ক্ষমতায় এলেন জো বাইডেন। এর ফলে অনেক ফিলিস্তিনির মাঝে নতুন আশার জন্ম নিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, এবার ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের নীতিগত অবস্থানে একটা পরিবর্তন আসবে। আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের ফিলিস্তিন নীতি ওয়াশিংটনের প্রচলিত নীতি ও অবস্থান থেকে আলাদা ছিল না। ওয়াশিংটনের বরাবরের ফিলিস্তিন নীতি হচ্ছে : ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতি নিঃশর্ত ও পরিপূর্ণ সমর্থন দান। অতএব বাইডেন প্রশাসন তার পূর্বসূরিদের এই নীতি অবস্থান থেকে সরে এসে ফিলিস্তিনিদের সহায়ক ভিন্ন ধরনের নীতি চর্চা করবেন, তেমনটি আশা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। আসলে জো বাইডেনের টিম নানাভাবে এটি স্পষ্ট করেছে, তার টিম ট্রাম্পের কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না। এমনকি তেল আবিব থেকে জেরুসালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে আনার সিদ্ধান্তটাও পাল্টানো হবে না। তার প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনও সমর্থন করবে না; সমর্থন করবে না ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আন্দোলন, চাইবে না ফিলিস্তিন দখলের অবসান, চাইবে না ইসরাইলের বর্ণবাদী সরকারের পতন কিংবা চাইবে না ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা ফিরে আসুক নিজেদের মাতৃভূমিতে।
ফিলিস্তিনিদের জানা ও শেখা উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রশাসনই ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে সত্যিকারের মধ্যস্থতাকারী হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি প্রশাসন ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক সহযোগিতা অতীতে জুগিয়েছে। ভবিষ্যতে এই দখলদারিত্ব বজায় রাখা কিংবা আরো জোরদার করায় ইসরাইলকে সহযোগিতা জুগিয়ে যাবে। ঠিক ট্রাম্প প্রশাসনের মতোই বাইডেন প্রশাসনও ইসরাইলকে সবকিছুই দিবে, যা চাইবে ইসরাইল। এই চাওয়া বৈধ কি অবৈধ, মানবিক না অমানবিক, যৌক্তিক না অযৌক্তিক- সে প্রশ্ন তুলবে না ওয়াশিংটন। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র জোগাতে যুক্তরাষ্ট্র পিছপা হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের পরিপূর্ণ সমর্থন নিয়েই ইসরাইল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করে তুলবে। তবে একটি সত্য ইসরাইলের জেনে রাখা উচিত- ইসরাইলের পর্যাপ্ত সামরিক শক্তিমত্তা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং একটি পরাশক্তির সীমাহীন সর্মথন থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল কখনোই পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা পাবে না, নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে। ষাট লাখ ফিলিস্তিনি তাদের স্বাধীনতা ও মাতৃভূমি হারিয়ে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনে আজো টিকে আছে। আরো লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করছে আশপাশের আরব দেশগুলো ও ‘ডায়াসপোরা’য়। তাদের জাতিসত্তা ও অস্তিত্ব বিলোপ করে বর্ণবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ইসরাইলের একমাত্র লক্ষ্য। ওরা আবার ইসরাইলকে অভিহিত করে বিশ্বের একটি ‘মডেল ডেমোক্র্যাসি’ নামে। আর এ ক্ষেত্রে ইসরাইলের বরাবরের সাথী যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ। এই লজ্জা যেমনি ইসরাইলের,তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের কাছে শুধু ফিলিস্তিনিরা নয়, বিশ্বের তাবৎ বিবেকবান মানুষের প্রত্যাশা এর বিপরীত কিছু।

Source : Jugantar 

সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

ফ্রা‌ন্সের পণ্য বয়কট প্রসং‌গে

       ‌বি‌শ্বের, মুস‌লিম বি‌শ্বের এবং ফ্রা‌ন্সের শা‌ন্তির জন্য ফ্রা‌ন্সের ভাবা উ‌চিৎ । হয় তো মুস‌লি‌মের মে‌রে ফ্রান্স য‌থেষ্ট কর‌তে পার‌বে কিন্তু ফ্রা‌ন্সের এবং সমগ্র বি‌শ্বের কি কিছুই ক্ষ‌তি হ‌বে না ? সে কার‌নেই  বল‌ছি তা‌দের তথা বি‌শ্বের ভাবা দরকার যে , বাক স্বাধীনতা মা‌নে কারও ধর্ম  বিশ্বা‌সে আঘাত করা নয় । অথচ বলা হয়  ফ্রান্স গনতন্ত্রের দেশ ।এ সমস্যার সমাধানের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।ফ্রা‌ন্সের পণ্য বয়ক‌টের রেশ বাংলা‌দে‌শেও ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে‌ছে ।  মুসলমানেরা আশা করেন আমা‌দের নবী সঃ কে  যেন  অপমান না করা হয়।

বাংলাদে‌শেও পণ্য বয়ক‌টের প্রচারপত্র :

‌জো বাই‌ডে‌নের সম্পদ

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের সম্পদ নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও শুরু হয়ে গেছে। 
 নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের স্টেট এবং ফেডারেল আয়কর রিটার্নের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে তার বরাত দিয়ে ফোর্বস গত বছর এক প্রতিবেদনে জানায়, বাইডেনের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯০ লাখ ডলার (৭৬ কোটি ২৩ লাখের বেশি টাকা)।  
১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিনেটর ছিলেন বাইডেন। সিনেটের হিস্টোরিক্যাল রেকর্ড বলছে, এই সময়ের মধ্যে ‌জো বাইডেনের বেতন ৪২ হাজার ৫০০ ডলার থেকে প্রতি বছর ১ লাখ ৭৪ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়েছে। জো বাইডেন তখন উপহাস করে বলতেন, আমি কংগ্রেসের সবচেয়ে গরীব মানুষ। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। তখন এক ধাক্কায় তার বেতন ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। প্রতি বছরে সেই বেতন দাঁড়ায় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ডলারে। ২০১৯ সালে বাইডেন জানিয়েছিলেন, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে তার এবং স্ত্রী জিল বাইডেনের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫ লাখ ডলার। 

সূত্র: টাউন অ্যান্ড কাউন্টি

Source: Bangladesh Protidin